ইতিহাস গড়া জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের

ইতিহাস গড়া জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু বাংলাদেশের mysportsbd.com-google-news-channel  

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ম্যাচ জিতে অনেক আগেই একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ দল। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ওডিআই ম্যাচ জেতার ফলে দলের অর্জনের তালিকাও একটু বড় হয়েছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে জয়ের আক্ষেপটা ছিল অনেক দিনেরই। কিন্তু এইবার সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে জয়ের দেখা পেয়েছে টাইগাররা। টেস্ট ও ওয়ানডে জয়ের পর বাংলাদেশ দল সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একটি ইতিহাস গড়া জয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

২৭ ডিসেম্বর (বুধবার) তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটিই বাংলাদেশের প্রথম জয়। ৯টি ম্যাচ হারার পর ১০তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এই জয় পেলো টাইগাররা।

বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) আগে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৯ উইকেটের বিনিময়ে নিউজিল্যান্ড ১৩৪ রান সংগ্রহ করে। লক্ষ্য তাড়া করে নেমে ১৮.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান করে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে লাল সবুজের দল।

টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হিসাবে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় ছিল না। রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালই হয়েছিল। তবে, ওপেনার রনি তালুকদার সেটা ধরে রাখতে পারেননি। টিম সাউদির বলে অ্যাডাম মিলনের তালুবন্দি হন রনি তালুকদার। তিনি ৭ বলে ১০ রান করেন। মাত্র ১৩ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর মাঠে নামেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি বড় ইনিংস খেলার আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু ১৪ বলে ১৯ রান তুলে জেমস নিশামের বাউন্সি বলে কিউই অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেন।

আরো পড়ুন: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেও বাদ পড়লেন এবাদত হোসেন

আত্মবিশ্বাসী সৌম্য সরকার বেশ কিছু ভালো শট খেলেন। বেন সিয়ার্সের লো ডেলিভারি বল লং অনে মারতে গিয়ে বোল্ড হন তিনি। সৌম্যের ব্যাট থেকে এসেছে ২২ রান। তাওহিদ হৃদয়ও তার ইনিংসটি লম্বা করতে পারেননি। মিচেল স্যান্টনারের বলে টিম সাউদির কাছে ক্যাচ দিয়ে হৃদয় মাঠ ছাড়েন। তাওহিদ হৃদয় ১৮ বলে ১৯ রান করেন।

আফিফ হোসেন ধ্রুবকে ক্রিজে দাঁড়াতেই দেননি টিম সাউদি। কিউই পেসারের শর্ট লেন্থ ডেলিভারির একটি বলে নিশামের তালুবন্দি হন আফিফ। বাংলাদেশ ৯৭ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপদে পড়ে যায়। ১৫ তম ওভারে লিটন দাস লেগ বিফোরের শিকার হন সাউদির বলে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় জীবন পান এই ওপেনার।

শেখ মেহেদিকে সাথে নিয়ে লিটন দাস ম্যাচের বাকিটা পথ পাড়ি দেন। দেখেশুনে শান্ত মনোভাবে খেলেন কিউই বোলারদের। যদিও তাদের শুরুটা ছিল ধীর, কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিটন দায়িত্ব নেন এবং কিউইদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মকভাবে খেলেন। লিটন দাসের চিত্তাকর্ষক পারফরম্যান্সের ফলে বাংলাদেশ দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জয়টি অর্জন করে। লিটন দাস ৩৬ বলে ৪২ রান এবং শেখ মেহেদি ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

এর আগে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত টসে জিতে কিউইদের ব্যাট করতে পাঠান। প্রথম ওভার থেকেই বাংলাদেশের বোলাররা ব্যাটিং পিচে চমক দেখিয়েছিলেন। ইনিংসের চতুর্থ বলে, স্পিনার শেখ মেহেদী হাসান কিউই ওপেনার টিম শেফার্ডকে শূন্য রানে বোল্ড করেন। এক রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর শরিফুল ইসলাম কিউইদের আর ঘুরে দাঁড়াতে দেননি। প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট শিকার করেন তিনি। পেসার শরিফুল ফিল অ্যালেন (১) ও গ্লেন ফিলিপসকে (০) পরপর দুই বলে আউট করে সাজঘরে ফেরান।

এক রানে তিন উইকেট হারানো কিউইদের জন্য বেশ অপ্রত্যাশিত ছিল। চতুর্থ উইকেটে নিউজিল্যান্ডের ভরসা ছিল ড্যারিল মিচেল ও মার্ক চ্যাপম্যান। কিন্তু বেশিক্ষণ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। দলের ২০ রানের মাথায় মিচেলকে বোল্ড করেন মেহেদি। আউট হওয়ার আগে মিচেল ১৪ রান করেন। চ্যাপম্যান ও জেমস নিশাম পঞ্চম উইকেটে ৩০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় মোকাবিলা করার চেষ্টা করেন। তবে ১৯ বলে ১৯ রান করা চ্যাপম্যানকে আউট করে ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন রিশাদ হোসেন।

এই জুটি ভাঙলেও স্যান্টনারের সঙ্গে ৪১ রানের জুটি গড়েন নিশাম। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই শরিফুল এই জুটিকে ভেঙে দেন। সৌম্য মিড উইকেটে স্যান্টনারের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। ২৩ রান করে মাঠ ছাড়েন কিউই অধিনায়ক।

দলীয় ব্যাটিং বিপর্যয়েও নিশাম এক প্রান্তে দৃঢ় হয়ে ব্যাট করছিলেন। তিনি ২৯ বলে ৪৮ রান করে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। মুস্তাফিজ তাকে ফিরিয়ে দলের স্বস্তি ফেরান। মুস্তাফিজের একটি ফুলটস বলে ডিপ কাভারে আফিফ হোসেনের তালুবন্দি হন নিশাম। মুস্তাফিজ-আফিফের টিম ওয়ার্কের ফলে সাউদিও আউট হন। নবম ব্যাটসম্যান ইশ সোধির উইকেট তুলে নেন তানজিম সাকিব। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড দলের সংগ্রহ দাড়ায় মাত্র ১৩৪ রান। বাংলাদেশের হয়ে তিনটি উইকেট নেন শরিফুল। মেহেদি ও মুস্তাফিজ নেন দুটি করে উইকেট।

• সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ১৩৪/৯। (অ্যালেন ১, শেফার্ড ০, মিচেল ১৪, ফিলিপস ০, চ্যাপম্যান ১৯, নিশাম ৪৮, স্যান্টনার ২৩, মিলনে ১৬*, সাউদি ৮, সোধি ২, সিয়ার্স ১*; মেহেদি ৪-০-১৪-২, শরিফুল ৪-০-২৬-৩, সাকিব ৪-০-৪৫-১, মুস্তাফিজ ৪-০-১৫-২, রিশাদ ৩-০-২৪-১, আফিফ ১-০-৯-০)।

বাংলাদেশ : ১৮.৪ ওভারে ১৩৭/৫। (লিটন ৪২*, রনি ১০, শান্ত ১৯, সৌম্য ২২, হৃদয় ১৯, আফিফ ১, শেখ মেহেদি ১৯ ; সাউদি ৪-০-১৬-১, মিলনে ৩.৪-০-৩৯-১, নিশাম ১-০-৭-১, সিয়ার্স ৪-০-৩৬-১, সোধি ২-০-২০-০, স্যান্টনার ৪-০-১৬-১)।

ফল : বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জয়ী

আরো পড়ুন