তিন ওয়ানডের মধ্যে প্রথম দুটিতে হেরে বাংলাদেশ দল এরই মধ্যে সিরিজে হেরে গেছে। ফাইনাল ম্যাচটি ছিল শুধুই একটি আনুষ্ঠানিকতা। নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য ছিল হোয়াইটওয়াশ করা, আর বাংলাদেশ চাচ্ছিল একটি সান্ত্বনার জয় । নাজমুল হোসেন শান্তের দল সফলভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছে। শেষ ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৯ উইকেটের বড় জয় নিয়ে সিরিজ শেষ করল লাল সবুজের দল।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) নেপিয়ারে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের বিধ্বংসী বোলিংয়ে সামনে নিউজিল্যান্ড দলের ব্যাটাররা অসহায় আত্মসমর্পণ করে। ৩১.৪ ওভারে মাত্র ৯৮ রানে অলআউট হয় তারা। জবাবে শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল এনামুল হক বিজয়ের উইকেট হারিয়ে ২০৯ বল হাতে রেখেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মত ওয়ানডে ম্যাচে ঐতিহাসিক জয়লাভ করে।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের শুরুতেই বাংলাদেশের ফাস্ট বোলারদের জোরালো আক্রমণের মুখে পড়ে নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্রকে ৮ রানে আউট করে প্রথম উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব। হেনরি নিকোলসও মাঠ ছাড়েন মাত্র ১ রান করে। টম ল্যাথাম ওপেনার উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ার চেষ্টা করলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ২১ রানে ল্যাথামকে আউট করে পার্টনারশিপ ভাঙেন শরিফুল।
আরো পড়ুন: Bangladesh এর বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের T20 স্কোয়াডে দুই পরিবর্তন
লাথামের বিদায়ের পর দলের ভরসা হয়ে ছিলেন ওপেনার উইল ইয়ং। কিন্তু ২৬ রানের মাথায় শরিফুল ইসলামের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান ইয়ং। ইয়ংকে আউট করে ১৪তম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
ইয়ং আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ দ্রুত ভেঙে পড়ে। শরিফুলকে সাপোর্ট দিয়েছেন অন্য তিন পেসার তানজিম, মোস্তাফিজুর রহমান ও সৌম্য সরকার। কিউই দল পথ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মাত্র ৯৮ রানে গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। উইল ইয়ং ক্রিজ ছাড়ার পর কেবল জোশ ক্লার্কসন ও আদিত্য অশোক ১০ রানের বেশি করতে পেরেছেন। দলের বাকিরা রান করতে হিমশিম খাচ্ছিল, যেন তাদের রান মোবাইল ফোনে সংখ্যার ডিজিটে আটকে গেছে।
নিউজিল্যান্ড দলকে একশো রানের আগেই অলআউট করার কৃতিত্ব বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্টের। শরিফুল, সাকিব ও সৌম্য ৩টি করে উইকেট নেন এবং মুস্তাফিজ পেয়েছেন একটি উইকেট। রান খরচের দিকে দিয়ে সবচেয়ে কৃপণ বোলার ছিলেন তানজীম। এই তরুণ পেসার ওভার প্রতি মাত্র ২ রান করে দিয়েছেন ।
লক্ষ্য তাড়া করতে মাঠে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও এনামুল হক বিজয় শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে সৌম্য সরকার তার দৃষ্টিশক্তি নিয়ে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না বলে ইঙ্গিত করছিলেন তিনি। এর আগে চোখে পানিও দিয়েছেন। তাতে কোনো লাভ না হলে ফিজিওকে ডেকে পাঠান। চোখে ড্রপও দেওয়া হয়। তবে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। যার ফলে ১৬ বলে ৪ রান করে মাঠ উঠে যায় সৌম্য সরকার।
অধিনায়ক শান্ত মাঠে এসে এনামুলের সাথে ৫০ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। দলকে জয়ের কাছাকাছি এনে এনামুল হক বিজয় ৩৭ রান করে আউট হন। লিটনের সঙ্গে বাকি কাজ সেরে সফলভাবে মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক শান্ত। লিটন মাত্র ১ রান করে অপরাজিত থাকলেও অধিনায়ক শান্ত ৫১ রান করেন।
এই ম্যাচে জয়ের মধ্যে দিয়ে ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের খরা কাটালো বাংলাদেশ। এর আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা ১৮ ম্যাচের একটিতেও জয় পায়নি বাংলাদেশ দল। এই জয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত। উপরন্তু, ২০৯ বল হাতে রেখে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় নিয়ে সিরিজটি শেষ করলো টাইগাররা।